ব্লগার হত্যার বর্ণনা দিল র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল পাঁচজন। হত্যাকাণ্ডের আগে তারা সর্বশেষ বৈঠকটি করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহসীন হলের সামনে।
সেখান থেকে তারা একসাথে যায় বই মেলায়। অনুসরণ করতে থাকে অভিজিৎকে। এরপর সুযোগ বুঝে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে অভিজিতের। এই একই গ্রুপ হত্যা করে সিলেটে ব্লগার অনন্তকেও।
এরা হলেন- সাদেক আলী, রমজান ওরফে সিয়াম, জুলহাস বিশ্বাস, নাঈম এবং জাফরান আল হাসান। হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ ও অর্থের যোগানদাতা ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান। হত্যাকাণ্ডের পর তা অনলাইনে প্রচার করেন জুলহাস ও জাফরান।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ। এর আগে র্যাবের পক্ষ থেকে ব্লগার অভিজিৎ ও সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিন সদস্যকে রাজধানীর নীলক্ষেত ও ধানমণ্ডি থেকে গ্রেপ্তারের দাবি করে গণমাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়।
এরপর র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে মুফতি মাহমুদ দাবি করেন, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের একজন সাদেক আলী অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সরাসির অংশ নিয়েছিল বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দুই জনের একজন হলেন তৌহিদুর রহমান। যিনি এই দুটি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অর্থের যোগানদাতা। গ্রেপ্তারকৃত অপরজন হলেন আমিনুল মল্লিক। যিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। আমিনুলের দায়িত্ব ছিল হত্যা মিশন সম্পন্নের পর দলের সদস্যদের আত্মগোপনে থাকতে এবং বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে সহায়তা করা।
মুফতি মাহমুদ জানান, গ্রেপ্তারকৃত তৌহিদুর রহমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি ব্রিটেনে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করলেও বাংলাদেশেও অবস্থান করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান কারাবন্দী জসিম উদ্দিন রহমানির অনুপস্থিতিতে তার নির্দেশে তৌহিদুর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম পরিচালনা করতেন। তিনিই সব ধরনের হত্যার নির্দেশ দিতেন এবং সংগঠনের আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করতেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে মুফতি মাহমুদ আরো জানান, জেলখানা থেকে জসিম উদ্দিন রাহমানির দিকনির্দেশনা কৌশলে নিয়ে আসতো দলের দুই সদস্য মিঠু ও আবুল বাশার। তারপর সেই নির্দেশ সরবরাহ করা হতো তৌহিদের কাছে।
রাহমানির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আরেক সদস্য সাদেক আলী। জুলহাস ও জাফরানের দায়িত্ব ছিল খুনের মিশন সফল হওয়ার পর অনলাইনের মাধ্যমে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়া। আর এই সবকিছুই তারা করতো তৌহিদুরের নির্দেশনায়।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হন অভিজিৎ রায়। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন।
হত্যাকাণ্ডের রাতেই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করে ফেসবুক ও টুইটারে বিবৃতি দেয়।
প্রতিক্ষন/এডি/তাফসির